‘সর্বাত্মক যুদ্ধের’ হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের
২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৮ এএম | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৮ এএম

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সতর্ক করে দিয়েছেন যে কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির ফলে দুই পারমাণবিক প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ‘সর্বাত্মক যুদ্ধ’ শুরু হতে পারে। ব্রিটেনের স্কাই নিউজকে আসিফ বলেছেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে ‘যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত’ থাকতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার, পহেলগাম শহরের কাছে একটি পর্যটন স্থানে জঙ্গিদের গুলিতে ২৬ জন পর্যটক নিহত হন।
ভারত বলেছে যে এই হামলাটি পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিরা চালিয়েছে, অন্যদিকে ইসলামাবাদ দায় অস্বীকার করেছে। শুক্রবার ভারত এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির পর আসিফ বলেছেন, ‘ভারতের নেয়া যেকোনো পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হিসাব করবে পাকিস্তান।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘সর্বাত্মক আক্রমণের ক্ষেত্রে ... অবশ্যই একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ হবে।’ তবে তিনি আশা আলোচনার মাধ্যমে বিরোধের সমাধান করা যেতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন। আসিফ ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভারত কোনও প্রমাণ ছাড়াই ‘সাজানো’ অভিযানে গুলি চালানোর ঘটনা ‘মঞ্চস্থ’ করেছে।
এদিকে, পাকিস্তান ও ভারত যখন আরেকটি সংঘর্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে, তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি কর্তৃক ঘোষিত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতকরণ সহ ধারাবাহিক শত্রুতাপূর্ণ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। জাতীয় পরিষদের স্পিকার আয়াজ সাদিকের মতে, সিন্ধু পানি চুক্তি কোনও অবস্থাতেই একতরফাভাবে বাতিল করা যাবে না। ‘বিশ্বব্যাংক সিন্ধু পানি চুক্তির গ্যারান্টার হিসেবে দাঁড়িয়েছে,’ তিনি জোর দিয়ে বলেন যে পাকিস্তান চুক্তিতে কোনও একতরফা পরিবর্তনের অনুমতি দেবে না।
পৃথক এক বিবৃতিতে, পিপিপি নেতা শারজিল মেমন ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে এটিকে প্রকাশ্য আগ্রাসন এবং আঞ্চলিক শান্তির জন্য গুরুতর হুমকি বলে অভিহিত করেছেন। ‘চুক্তি স্থগিত করা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং এ অঞ্চলে চলমান শান্তি প্রচেষ্টাকে দুর্বল করার ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা বলে মনে হচ্ছে,’ তিনি বলেন। ‘ভারত এর আগে আন্তর্জাতিক সফরে এবং উল্লেখযোগ্য সময়ে নিজেদের অত্যাচার ও অবিচার থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য মিথ্যা পতাকা অভিযানের আশ্রয় নিয়েছে। বহু বছর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ভারত সফরের সময়, ভারত সরকার একটি মিথ্যা পতাকা অভিযান পরিচালনা করেছিল, যার ফলে নিরীহ শিখদের রক্তপাত হয়েছিল। এখন পেহেলগামে একই কৌশল পুনরাবৃত্তি হচ্ছে,’ তিনি বলেন।
এক সংবাদ সম্মেলনে মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টের (এমকিউএম-পি) নেতারা বলেন, ভারত ‘দ্রুত একটি ধর্মীয়ভাবে চরমপন্থী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে’। তারা বলেন, এখন এটা স্পষ্ট যে ভারত কেবল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যই নয়, বরং বিশ্ব শান্তির জন্যও একটি গুরুতর হুমকি। ‘যদিও পাকিস্তান কখনও কোনও ধর্মীয় চরমপন্থীকে দেশটির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করেনি, ভারত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে হিন্দু চরমপন্থীদের শাসনাধীনে রয়েছে, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হওয়ার দাবিকে অর্থহীন করে তুলেছে,’ দলের সিনিয়র নেতা ডঃ খালিদ মকবুল সিদ্দিকী বলেন। ভারতের ‘পানি আগ্রাসন’-এর নিন্দা জানিয়ে ডঃ সিদ্দিকী বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় পরিচালিত সিন্ধু পানি চুক্তির দিকে ইঙ্গিত করেছেন এবং সতর্ক করেছেন যে মোদী সরকারের একতরফাভাবে এটি বাতিল করার কোনও অধিকার নেই।
পিটিআই সিন্ধু শাখার সভাপতি হালিম আদিল শেখ অভিযোগ করেছেন যে মোদী সরকার সন্ত্রাসবাদের বিশ্বব্যাপী পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠেছে এবং প্রতিবেশী দেশটিকে ‘পানি সন্ত্রাস’ বলে অভিযুক্ত করেছেন। ‘কানাডা ইতিমধ্যেই মোদী সরকারকে সন্ত্রাসী ঘোষণা করেছে এবং যুক্তরাজ্যে ভারতীয় এজেন্টদের সাথে একই ধরণের কার্যকলাপের প্রমাণ পাওয়া গেছে,’ তিনি ইনসাফ হাউস নামক দলীয় কার্যালয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলার সময় বলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামি পাকিস্তান পার্টির প্রধান শহীদ খাকান আব্বাসি সরকারকে ভারতের পদক্ষেপের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাতে বলেছেন এবং এবার তাদের উচিত ২০১৯ সালে মোদী সরকার কর্তৃক জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ভুলের পুনরাবৃত্তি না করা। ‘কিন্তু একই সাথে, এ ধরণের পরিস্থিতিতে আমাদের একটি শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের জন্য আমাদের ঘর তৈরি করতে হবে। এবং এর জন্য, আমাদের সকল প্রধান বিষয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ঐকমত্য প্রয়োজন,’ তিনি আরও যোগ করেন।
বৃহস্পতিবার বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী মীর সরফরাজ বুগতি জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সভায় গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্তগুলিকে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একটি নির্ণায়ক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরের আইনসভা (এজেকে) এক তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ অধিবেশনে ভারতকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে ঘোষণা করেছে যে, যেকোনো সামরিক অভিযানের জবাবে কাশ্মীরি জাতি এবং পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী উভয় পক্ষই কঠোর ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাবে। ভারতীয় প্রচারণার নিন্দা এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি সমর্থন নিশ্চিত করে বিধানসভায় উপস্থাপিত বেশ কয়েকটি প্রস্তাবের জবাবে দেয়া বক্তৃতাগুলিতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান উঠে আসে। সংসদে ভাষণ দিতে গিয়ে আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী আনোয়ারুল হক বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সতর্ক এবং সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। ভারত যদি নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর কোনও অভিযান শুরু করে, তাহলে তার কঠোর জবাব দেয়া হবে। আমরা কেবল স্লোগান দেই না - আমরা পদক্ষেপ নিই।’
কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাগুলি : ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ভারত ও পাকিস্তান ২০২১ সালে এই অঞ্চলে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল। তবে এর পরেও একাধিকবার এই চুক্তি লঙ্ঘন করা হয়েছে। ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহাড়ি শহর পহেলগামের কাছে এক সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হওয়ার কয়েকদিন পর এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটলো। পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের এক কর্মকর্তাও রাতভর দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ঝিলম উপত্যকা জেলার ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা সৈয়দ আশফাক গিলানি এএফপি সংবাদ সংস্থাকে বলেন, “লিপা উপত্যকায় রাতভর পোস্ট-টু-পোস্ট গুলিবর্ষণ চলছে।” গিলানি বলেন, “বেসামরিক জনগণের উপর কোনও গুলিবর্ষণ হয়নি। জীবনযাপন স্বাভাবিকভাবে চলছে। স্কুল খোলা রয়েছে।” পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের প্রশাসনিক কেন্দ্র মুজাফ্ফরাবাদ শহর থেকে প্রায় ৯৫ কিলোমিটার পূর্বে ভারতের সাথে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর অবস্থিত লিপা উপত্যকা।
আটক বিএসএফ সদস্যকে ফেরাতে ফ্ল্যাগ মিটিং : পেহেলগাম আবহের মাঝেই পাকিস্তান সেনার হাতে আটক ভারতীয় জওয়ানকে দেশে ফেরাতে ইসলামাবাদের সঙ্গে বৈঠকে বিএসএফ। ভারতীয় সেনা সূত্রে খবর, বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউ ভুলবশত পাঞ্জাবের ফিরোজপুর সেক্টরের সীমান্ত পেরিয়ে গিয়েছিলেন। এরপরই পাকিস্তান রেঞ্জার্সের হাতে ধরা পড়েন ওই জওয়ান। বর্তমানে তাকে ফেরাতে পাকিস্তানের সঙ্গে ফ্ল্যাগ মিটিং চলছে ভারতের।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরে যে জঙ্গি হামলা হয়েছে তারপর পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ভারত। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানের আকাশে ভারতীয় বিমানকে নিষিদ্ধ করেছে ইসলামাবাদ। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের আবহ তৈরি হচ্ছে বলে অনুমান করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। এ আবহে হঠাৎ করেই বৃহস্পতিবার খবর আসে যে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার রিষড়ার বাসিন্দা পিকে সিং (৪০) পাকিস্তানি সেনার হাতে আটক। তিনি ফিরোজপুর সেক্টরের আন্তর্জাতিক সীমান্তে পোস্টেড ছিলেন। বুধবার বিকেলে ‘ভুল করে’ তিনি সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে ঢুকে পড়েন। খবর পাওয়ার পর থেকেই উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় তার পরিবার। বিএসএফের ১৮২ নম্বর ব্যাটালিয়নের এ কনস্টেবলকে নিরাপদে, সুস্থভাবে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করছে ভারত। সূত্র : ডন, বিবিসি, টিওআই।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

আমিরাতের উন্নয়নে বাংলাদেশিদের অবদানের প্রশংসা এবং সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভাটা, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা

ব্রিফিংয়ে জয়সোয়াল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনায় ভারতের উদ্বেগ!

আমদানি বৃদ্ধি ও শুল্ক কমানোর পণ্য তালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে পতিত সরকারের করা চুক্তি স্থগিত করুন

কমলো উড়োজাহাজের তেলের দাম

লিবিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ

আমরা কি নতুন কোনও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি? প্রশ্ন মেজর হাফিজের

মঙ্গলের মাটির তলায় তরল পানির সন্ধান

পুঁজিবাজারে আবারো বড় দরপতন

পুঁজিবাজারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ চান বিএমবিএ

ক্রিলিক একটি পরিপূর্ণ জ্ঞান ভান্ডারে পরিণত হবে -এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী

হাইকোর্টের আদেশ চেম্বারে স্থগিত নগদে প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ

পুলিশ কোনো কিলার ফোর্স হতে পারে না : আইজিপি

হাসিনার ভয়ে যারা গর্তে লুকিয়ে ছিল তারা এখন সংস্কারের তালিম দিচ্ছে : আমীর খসরু

সিএজি কার্যালয়ে বিশেষ সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন

পদ্মা সেতু দিয়ে কি নদীর ক্ষতি করছেন না, প্রশ্ন মৎস্য উপদেষ্টার

অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে তিতাসের সাঁড়াশি অভিযান